এম আবু হেনা সাগর, ঈদগাঁও:

বৃহত্তর ঈদগাঁওতে বেড়েই যাচ্ছে শিশু শ্রম। হরেক রকমের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান শিশুদের অর্থের প্রলোভনে ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত করে চলছে । এক পর্যায়ে কারণে-অকারণে তাদের ভাগ্যে জোটছে শারীরিক, মানসিক ও শোষনসহ নির্যাতন। কখনো আবার বৈষম্যের শিকারও হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষার আলোর সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অসহায় এই শিশুরা। আবার অভাবের তাড়না ও সংসারের অশান্তির কারণে পথকলি শিশুরা বাঁচার তাগিদে জীবিকার সন্ধানে নেমে পড়েছে শ্রম জগতে বা রাস্তায়। একসময় পথভ্রষ্ট হয়ে চলে যায় টাকার রাজ্যে।  ছোট্ট বয়সেও অনেকে সংসারের হাল ধরতে নেমে পড়ে জীবন যুদ্ধে।

বলতে গেলে, শোষকের কাজে শিশুশ্রম বিশেষ করে নিম্ন বিত্তদের দারিদ্রের অন্তরালে সংসারের অভাব, দারিদ্রতা এবং পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশী হয়ে যাওয়ায় উক্ত পরিবারের সদস্যরা শিক্ষা বঞ্চিত অজ্ঞ অভিভাবকদের আর্থিক সুবিধা ক্ষুধার রাজ্যে যুদ্ধ করে এক প্রকার বাধ্য হয়ে পড়ে প্রলোভনে লোভনীয় প্রস্তাবের বিনিময়ে ঐসব শিশুরা শিক্ষার বই-খাতা-কলমের পরিবর্তে নিরুপায় হয়ে ঢুকে পড়ে শ্রম জগতে।  সু-শিক্ষার ধ্যান, ধারণা ও বিদ্যালয়ে যাওয়ার মনমানসিকতা থাকলেও অভাব হয়ে উঠে সবচেয়ে বড় বাধা। ফলে এসব শিশুরা এখন শিক্ষার কাছ থেকে পরাজিত হয়ে দারিদ্রের কাছে ঝুঁকছে।

তথ্য মতে, জেলা সদরের বৃহত্তর  ঈদগাঁও জুড়ে অসংখ্য শিশু ঝুঁকিপূর্ণ মরণ পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। অবুঝ শিশু-কিশোররা লবণের মাঠ, শুটকি মহল, ইটভাটায় ইটভাঙতে, ওয়ার্কসপে ওয়েল্ডিং করার কাজে, কিটনাশক বিক্রির দোকানে, হোটেল রেস্তোরাসহ নানা ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত থাকতে দেখা যায় প্রতিক্ষণে প্রতিমুহুর্তে।

ঈদগাঁও বাজারে এক কুলিং কর্ণারের কর্মচারী নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, সে সকাল থেকে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত পযন্ত একটানা পরিশ্রম করে মজুরী পায় মাত্র অল্প টাকা। এ নিয়ে পরিবার চলাতো দুরের কথা, নিজেও চলা কঠিন হয়ে পড়ে। এভাবে আর কতকাল? একটি অসাধু মহল প্রত্যান্ত গ্রামাঞ্চলের কচি-কাঁচা শিশুদের ঝুঁকিপূর্ন কাজের মত হীনকাজে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ উঠছে।

অন্যদিকে কাগজ কুড়ানো, ফেরিওয়ালা, যানবাহনের হেলপারের কাজে নিয়োজিত রয়েছে বহু শিশু। তাছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় কাজ করতে গিয়ে দূর্ঘটনায় শিকার হয়ে অনেকেই অকালেই ঝরে পড়ে মৃত্যুর কূলে। কেউ কেউ পঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে জীবন-যাপন করছে।

৩০ এপ্রিল সকালে ঈদগাঁও কলেজ গেইট সংলগ্ন এক ব্রিকফিল্ডে  দেখা যায়, প্রচন্ড গরমের মাঝেও অর্থাভাবে কিছু অসহায় শ্রমিককে কয়েক ক্যাটাগরিতে মজুরি কাজ করতে। কেউবা এক সাথে প্রায় অর্ধশতাধিকের মত ইট কাঁধে করে এপার ওপারে আনা নেওয়া করতে, আবার কেউবা বানানো ইট পোড়াতে আনতে চোখে পড়ে।সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করে ইট ভাঙ্গছে  তাদেরকে ফুট হিসেবে কংকরের দাম দেয় মালিক পক্ষরা। এ

এদিকে মহাসড়কসহ বিভিন্ন উপসড়কের নানা যানবাহনের হেলপারের দায়িত্ব পালন করে শিশুরা। ইসলামাবাদ কাঞ্চনমালার আট বছর বয়সী সাগর হোসেন নামের এক শিশুর সাথে এ প্রতিনিধির কথা হলে সে জানান, পিতা মাতা থাকার পরেও গাড়ীর হেলপারের কাজে শ্রম দিচ্ছে। লেখাপড়া করছে কিনা জানতে চাইলে সে আগে করত, এখন পড়াশোনা করেনা।

তবে অভিজ্ঞ মহলের মতে, শিশু অধিকার আদায়ের লক্ষে বিভিন্ন সংগঠন কাজ করলেও তা শুধুই কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। তদন্ত পূবর্ক অল্প বয়সে লেখাপড়া থেকে বাদপড়া ঝুঁকিপূর্ণ কাজে অংশ নেওয়া শিশুদের সেসব কাজ থেকে ফিরিয়ে এনে শিক্ষাদান করালে অনেকটা ভাল হবে বলে। পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে মায়েদের সাথে ছেলে মেয়েদের পাঠদানের বিষয়ে গুরুত্বারোপ শীর্ষক সেমিনারের ব্যবস্থা করলে হয়তো শিশুশ্রমের প্রতি বিমুখ হয়ে লেখাপড়ায় আগ্রহতা আরো দ্বিগুন আকারে বৃদ্বি পেত বলেও মত প্রকাশ করেন তারা।